ব্ল্যাক হোল কিভাবে তৈরি হয়

    মনরিল বলেন,'যখন কোনো সাধারণ বস্তু সংকুচিত হয়ে যথেষ্ট পরিমাণে ছোট হয়ে যায় তখন থেকে ব্ল্যাক হোলের সূচনা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যখন বড় বড় নক্ষত্রের জ্বালানি শেষ হয়ে যায় তখন তারা মহাকর্ষের মাধ্যমে নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংস করে ব্ল্যাক হোল সৃষ্টি করে।


    ব্ল্যাক হোল কিভাবে তৈরি হয়
    হোল ছবি

    ব্লাকহোল যেভাবে সৃষ্টি হয়

    মহাকাশ খুবই রহস্যময় মহাকাশ সম্পর্কে আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন জাগে এই মহাকাশের সবচেয়ে রহস্যময় বস্তু হল ব্ল্যাক হল । বিজ্ঞানীরা এখনো পর্যন্ত ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দিতে পারেননি । আজ আমরা কথা বলবো ব্ল্যাকহোলের ব্যাপারে । ব্ল্যাক হল হলো মহাকাশের সবচেয়ে ভারী বস্তুর ঘনত্ব বেশি তাই ব্ল্যাকহোলের একটি মটরদানার আকৃতির ভর আমাদের সূর্যের ভরের চেয়ে অনেকগুণ বেশী । একটি সম্পূর্ণ ব্ল্যাকহোলের ঘর আমাদের সূর্যের চেয়ে লক্ষ্য বা কোটি গুণ বেশি হতে পারে । তাহলে গ্র্যাভিটি মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সবচেয়ে বেশি এই প্রচন্ড আকর্ষণ বলের জন্য সব জিনিসকে তার দিকে আকর্ষণ করে । আমরা সবাই জানি এই মহাবিশ্ব আলোর গতিবেগ সবচেয়ে বেশি এতই বেশি যে আলো এর মধ্যে থেকে ফিরে আসতে পারে না । তাই এটিকে কালো দেখায় এবং এটির নাম দেওয়া হয় ব্ল্যাকহোল ।ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে প্রথম ধারণা দেন ইউকের জন মিচেল  ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে । তিনি মহাকাশে কালো বস্তু আবিষ্কার করেন যে এটি আকারে সূর্যের চেয়ে ৫০০ গুণ বড় ছিল ।এবং সেখান থেকে আলো ফিরে আসতে পারছিল না তিনি এটির নাম দেন ডাক্তার ।

    এরপর ১৯১৫ সালে আইনস্টাইন তার জেনারেল থিওরি অফ রিলেটিভিটি জন মিচেলের ধারনাটি   কে সুস্পষ্ট করেন । তিনি বলেন যে হালকা বস্তুর কাছে সময় দ্রুত গতিতে চলে এবং ভারী বস্তুর কাছে সময় ধীর গতিতে চলে ।গ্র্যাভিটি স্পেস টাইম করতে পারে এবং আলোকীয় প্রভাবিত করে । বিখ্যাত সাইন্টিস্ট স্টিফেন হকিংস এর মতে ব্ল্যাকহোলের কাছে যদি কোনো স্পেস শিপ পাঠানো সম্ভব হয় । তাহলে স্পেসশিপ যদি ব্ল্যাক হোল ঢুকে পরিক্রমণ করতে পাঁচ বছর সময় লাগে তাহলে পৃথিবীতে ১০ বছর সময় কেটে যাবে । অর্থাৎ স্পেস শিপ যখন পৃথিবীতে ফিরে আসবে তখন স্পেসশিপের যাত্রীদের চেয়ে পৃথিবীতে থাকা মানুষদের বয়স ৫ বছর বৃদ্ধি পাবে । তাই ব্ল্যাকহোল কে ন্যাচারাল টাইম মেশিনে বলা হয় । 

    একটি ব্ল্যাকহোলে যে অংশটি আমরা দেখতে পাই সেটিকে ইভেন্ট হরাইজন বলে । ইভেন্ট হরাইজন হল ব্ল্যাকহোলের বাইরের সেই সীমারেখা অতিক্রম করলে কোন বস্তুর পক্ষেই ব্ল্যাকহোলের প্রচন্ড মহাকর্ষ বল উপেক্ষা করে ফিরে আসা সম্ভব নয় । ব্ল্যাকহোলের ভেতরে কি আছে তা এখনও জানা সম্ভব হয়নি । কারণ ব্ল্যাকহোলের আকর্ষণ এত বেশি যে কোনো বস্তুই ইভেন্ট হরাইজন অতিক্রম করলে সেটির কোন অস্তিত্ব থাকে না । বিজ্ঞানীদের মতে ব্ল্যাকহোলের সমস্ত ভোর কেন্দ্রে কেন্দ্রীভূত হয়  এটিকে সিবুলাটি বলা হয় । 

    ব্ল্যাকহোল দুই প্ররকার স্টেলারর্মাসিভ ব্ল্যাকহোল ও সুপার্মাসিভ ব্ল্যাকহোল । 

    ১। স্টেলারর্মাসিভ  ব্ল্যাকহোল / stellar

     স্টেলারর্মাসিভ   ব্ল্যাকহোল সূর্যের চেয়ে অনেকগুণ বড় । স্টেলারর্মাসিভ ব্ল্যাকহোল তৈরি হয় যখন সূর্যের চেয়ে অনেক বড় কোন নক্ষত্রের মৃত্যু ঘটে । আমরা সবাই জানি নক্ষত্রের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে হাইড্রোজেন থাকে । নিউক্লিয়ার ফিউশন এর ফলে এই হাইড্রোজেন হিলিয়াম এ পরিণত হয় ।এবং প্রচুর পরিমাণে তাপ এবং আলো রেডিয়েশন নির্গত হয় । তাই আমরা নক্ষত্রদের উজ্জ্বল দেখি এবং সূর্যের তাপ অনুভব করি । নক্ষত্রদের গ্র্যাভিটি এবং রেডিয়েশন একে অপরের বিরুদ্ধে কাজ করে । এবং নক্ষত্রের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে যতক্ষণ ভারসাম্য বজায় থাকে ততক্ষণ নক্ষত্রটি স্বাভাবিক থাকে । কিন্তু যেসব নক্ষত্র সূর্যের চেয়েও অনেক গুণ বড় হয় সেসব নক্ষত্রের কেন্দ্রের প্রচন্ড হিট এবং প্রসারের ফলে নক্ষত্রের কেন্দ্রে আয়রন তৈরি হতে শুরু করে ।

    আরও পড়ুন: জ্যোতির্বিজ্ঞান এর জনক কে?

    এবং কেন্দ্রে জমা হয় কিন্তু এই আয়রন এটাম ্থকে কোন এনার্জি তৈরি হয় । ফলে গ্র্যাভিটি এবং নক্ষত্র  এনার্জি রেডিশন মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয় । এবং সেকেন্ডেরও কম সময়ে সম্পূর্ণ নক্ষত্রটি কোলাপ করে যায় । এবং একটি জোরালো বিস্ফোরণ ঘটে যা সুপারনোভা বলা হয় । এই বিস্ফোরণের ফলে নক্ষত্র নক্ষত্র কেন্দ্রে কেন্দ্রীভূত হয় এটি ঘনত্ব বেশি হয় । ফলে এটি তার চারপাশে সব জিনিসকে গ্রাস করতে শুরু করে  এবং আকারে বড় হয় । 

    ২। সুপার্মাসিভ ব্ল্যাকহোল / Supermassive

    সুপার্মাসিভ ব্ল্যাকহোল সূর্যের চেয়ে লক্ষ লক্ষ গুণ বড় হয় । যদিও সুপার্মাসিভ ব্ল্যাকহোল কিভাবে সৃষ্টি হয় তা এখনও বলা সম্ভব হয়নি । সব গ্যালাক্সির মাঝখানে একটি করে সুপার্মাসিভ ব্ল্যাকহোল থাকে । আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে সুপার্মাসিভ ব্ল্যাকহোল রয়েছে । সেটির নাম হল সাজিটেরি ‍A দিয়েছে । এটি আমাদের সৌরমন্ডল থেকে ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত । এবং এটি সূর্যের থেকে ৪০ লক্ষ গুণ বড় এর ব্যস হল ৮ কোটি মাইল ।

    আরও পড়ুন: পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের ব্ল্যাক হোল আসলে ব্ল্যাক হোল নয়!

    আজ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া ব্ল্যাক হোলের মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্ল্যাকহোলের নাম হল s500 14818 সূর্যের চেয়ে চার হাজার কোটি গুণ বড় ।এর ব্যস ২৩ হাজার ৬০০ কোটি কিলোমিটার । এবং এটি আমাদের সৌরমন্ডল থেকে ১২ কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত । আমাদের সবচেয়ে কাছের ব্ল্যাকহোলের নাম হল v1616 ব্ল্যাকহোল এটি আমাদের সৌরমন্ডল থেকে তিন হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত ।এটি একটি স্ট্যাটাসব্ল্যাকহোল এবং সূর্যের চেয়ে ১৩ গুনবড় । ব্ল্যাকহোল য়েমন সবকিছুকে গ্রাস করে তেমনি ব্ল্যাক হোলের উপরে থাকে হোয়াইট হল । যে সব কিছু সৃষ্টি করছে অনেক বিজ্ঞানীদের মতে ব্ল্যাকহোল এবং হোয়াইট হোল মিলিত ভাবে তৈরি করে ওয়াম  হোল । যা দিয়ে আমরা অন্য ডাইমেনশন বা গ্যালাক্সিতে ট্রাভেল করতে পারি । যদিও হোয়াইট হল একটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক এবং বাস্তব প্রমান এখনো পাওয়া যায়নি । ব্ল্যাকহোল ফিজিক্সের কোন নিয়ম মেনে চলে না বিষয়টি খুবই জটিল এবং রহস্যময় । বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাকহোল নিয়ে গবেষণা করে চলেছেন । যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে লাইক ও শেয়ার করতে ভুলবেন না কমেন্ট বক্সে আপনাদের মতামত জানান ।


    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    নবীনতর পূর্বতন

    যোগাযোগ ফর্ম