মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি কাকে বলে? আমরা কোন গ্যালাক্সিতে বাস করি

আমাদের বাসস্থান পৃথিবী সৌরজগতের একটি ছোট গ্রহ আর সমগ্র সৌরজগৎ ছায়াপথের একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ একাধিক গ্রহ নিয়ে যেমন সৌরজগৎ গড়ে ওঠে তেমনি ভাবে অসংখ্য সৌরজগৎ মিলে তৈরি হয় একটি ছায়াপথ ইংরেজিতে ছায়াপথ কে বলা হয় গ্যালাক্সি । 

মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি কাকে বলে? আমরা কোন গ্যালাক্সিতে বাস করি
মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বা আকাশগঙ্গা

আমাদের সৌরজগৎ যে ছায়াপথে অবস্থিত তার নাম মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি বাংলায় একে বলা হয় আকাশগঙ্গা ছায়াপথ।এরকম অগণিত গ্যালাক্সি রয়েছে সমগ্র সৃষ্টি জগত সম্পর্কে চিন্তা করতে চাইলে ছায়াপথের প্রাথমিক তথ্য গুলো আমাদের অবশ্যই জানা দরকার । এই পর্বে আলোচনা করা হবে

মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি কাকে বলে

 আমাদের বাসস্থান পৃথিবী সৌরজগতের একটি ছোট গ্রহ আর সমগ্র সৌরজগৎ ছায়াপথের একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ একাধিক গ্রহ নিয়ে যেমন সৌরজগৎ গড়ে ওঠে তেমনি ভাবে অসংখ্য সৌরজগৎ মিলে তৈরি হয় একটি ছায়াপথ ইংরেজিতে ছায়াপথ কে বলা হয় গ্যালাক্সি ।গ্যালাক্সি বায়াত সম্পর্কে ছায়াপথ আমাদের কল্পনার চেয়েও অনেক গুণ বড় সূর্যের প্রকৃত আকৃতি ও কল্পনা করতে পারে। না অথচ সূর্য একটি ছায়াপথ তুলনায় নিতান্তই অনু-পরমানু সমান আমাদের সূর্যের চেয়েও বহু তারকা নক্ষত্র নীহারিকা সৌরজগৎ এবং মহাজাগতিক বস্তুর সমন্বয়ে ছায়াপথ গড়ে ওঠে । একটি আদর্শ ছায়াপথে এক কোটি থেকে ১ লক্ষ কোটি তারকা থাকতে পারে । 

মহাজাগতিক বস্তুর দূরত্ব পরিমাপ করতে আলোকবর্ষ ব্যবহার করা হয়। এক বছরে আলো যত দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে তাই হল আলোকবর্ষ এক আলোকবর্ষ সমান নয় লক্ষ কোটি কিলোমিটার । অর্থাৎ আলো প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৩ লক্ষ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে সেই হিসেবে ছায়াপথের ব্যাস সাধারণত কয়েকশো আলোকবর্ষ থেকে কয়েক হাজার আলোকবর্ষ বিস্তৃত হয় । এবং একটি ছায়াপথ থেকে আরেকটি ছায়াপথের দূরত্ব হতে পারে কয়েক লক্ষ থেকে কয়েক কোটি আলোকবর্ষ ।

মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি কাকে বলে আমরা কোন গ্যালাক্সিতে বাস1 করি
আকাশগঙ্গা ছায়াপথের ছবি।

আমরা কোন গ্যালাক্সিতে বাস করি 

আমাদের অবস্থান হল মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি আকাশগঙ্গা ছায়াপথের আমাদের বাসস্থান পৃথিবী এই বিশাল ছায়াপথের একটি ছোট্ট সৌরজগতের অতি ক্ষুদ্র একটি গ্রহ। অন্ধকার রাতের আকাশে উজ্জ্বল আলোর দেখা যায় সেটি হল আকাশ গঙ্গা ছায়াপথ। অতীতে মনে করা হতো আকাশগঙ্গা ছায়াপথের বাইরে হয়তো সৃষ্টিজগতে আর কিছু নেই। কিন্তু ৯২৪ সালে মানব সমাজের সেই ধারণা আমূল বদলে যায়। সে বছর এডুইন হাবল বহুদূর ভর্তি নীহারিকার কিছু তারকা শনাক্ত করতে সক্ষম হন । পৃথিবী থেকে তারার দূরত্ব নির্ণয় করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা ভুল বুঝতে পারেন। নিঃসন্দেহে সেগুলো আমাদের পথের অংশ নয় বরং সেগুলো ছিল মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির চেয়েও বহু গুণ বড় । এবং বহু দূরবর্তী ছায়াপথের অংশ তখন থেকে সৃষ্টি জগত সম্পর্কে ধারণা পেতে বিজ্ঞানীরা । 

একটি সহজ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছেন প্রশ্নটি হল এমন কতগুলো গ্যালাক্সি থাকতে পারে? আমাদের সূর্য একটি নক্ষত্র এর চেয়েও বহু গুণ বড় । অসংখ্য নক্ষত্র ছায়াপথে রয়েছে পৃথিবীর মতো গ্রহ গুলো। যেমন সূর্যকে কেন্দ্র করে প্রদক্ষিণ করে তেমনি ভাবে সূর্যের মতো নক্ষত্রগুলো ছায়াপথের কেন্দ্রকে ঘিরে আবর্তিত হয় শুধু তাই নয় ছায়াপথ নিজেও মহাবিশ্বে তার অবস্থান অনুযায়ী ঘুরতে থাকে। আমাদের নিজস্ব ছায়াপথ টি একবার আবর্তন করতে সময় নেয় প্রায় ২০ কোটি বছর । বিভিন্ন আকারের হতে পারে তার মধ্যে উপবৃত্তাকার কুণ্ডলাকার সর্পিলাকার এবং অনিয়মিত আকার উল্লেখযোগ্য । 

আরও পড়ুন: এরোপ্লেন ১ লিটার তেলে কত কি:মি: যায় বা জেট ইঞ্জিন কিভাবে কাজ করে?

পারস্যের জ্যোতির্বিজ্ঞানী সর্বপ্রথম কোন ছায়াপথের বর্ণনা করেন। এরপর ১৬১০ সালে বিজ্ঞানী গ্যালিলিও দূরবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে আকাশ গঙ্গা ছায়াপথ পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি অনুধাবন করেন আকাশের অতি উজ্জ্বল এই অংশটি মূলত অগণিত তারার সমষ্টি। ১৭৮০ সালে ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী চার্লস মেসি আর এরকম ৩২ ছায়াপথের তালিকা প্রণয়ন করেন। এরপর বহু গবেষক বহুৎ ছায়াপথ সম্পর্কে ধারণা করলেও দীর্ঘদিন পরিষ্কার পর্যবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত শক্তিশালী কোন টেলিস্কোপ বিজ্ঞানীদের ছিল না। 

আরও পড়ুন: মহাবিশ্বের বৃহত্তম গ্যালাক্সির সন্ধান, সূর্যের চেয়ে প্রায় ২৪০ বিলিয়ন গুণ বড়

সেই প্রয়োজনীয়তা থেকে হাজার ১৯৯০ সালে মহাকাশে স্থাপন করা হয় হাবল স্পেস টেলিস্কোপের। তারপর থেকে এই মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র টি কয়েক লক্ষ ছবি পৃথিবীতে পাঠিয়েছে কিন্তু ১৯৯৫ সালের পাঠানো একটি ছবি আজীবনের মতো মহাকাশ গবেষণার ইতিহাস বদলে দেয়। এই ছবির নাম রাখা হয় শুধুমাত্র একটি ছবিতে প্রায় তিন হাজারের বেশি ছায়াপথ দেখা যাচ্ছে যা সমগ্র সৃষ্টিজগতের তুলনায় একটি বিন্দু পরিমাণ মাত্র। পরবর্তীতে হাবল টেলিস্কোপ সহ অন্যান্য পর্যবেক্ষণ যন্ত্র দিয়ে আরও অনেক অনেক দূরের অসংখ্য গ্যালাক্সির অস্তিত্ব সম্পর্কে জানা গেছে। ২০২১ সালে মহাকাশে পাঠানো হবে ১০০ গুণ বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ যন্ত্রটি কাজ শুরু করার পর হয়তো মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের ধারণা সম্পূর্ণ বদলে যেতে পারে। 

মানুষের সহজেই  দেখতে পায় তার উপর ভিত্তি করে সম্পর্কে ধারণা প্রকাশ করা হয়েছে। আধুনিক যন্ত্র দিয়ে সৃষ্টি জগতের যে পর্যন্ত দেখা যায় তাকে বলা হয় অবজারভেশন ইউনিভার্স। পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্ব বিজ্ঞানীদের ধারণা পর্যবেক্ষণযোগ্য প্রায় ১২ হাজার কোটি গ্যালাক্সি থাকতে পারে। যেখানে পর্যবেক্ষণযোগ্য শেষ হয়েছে সেই সীমানা কে বলা হচ্ছে কসমোলজিক্যাল হরাইজন বাংলায় যাকে বলা যায় মহাজাগতিক দিগন্ত । অবশ্যই আরো অসংখ্য লুকিয়ে রয়েছে যা মানুষের কল্পনার বাইরে বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত কোন যন্ত্র দিয়ে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব নয়। এমনকি পর্যবেক্ষণযোগ্য মহাবিশ্বের ভেতরে থাকা ৯০% ছায়াপথ এখনো পর্যবেক্ষণ করা বাকি আছে। 

মাত্র দুইটি টেলিস্কোপ দিয়ে সবগুলো সম্ভব নয় পথের অবস্থান একরকম নয় কিছু কিছু অঞ্চলে ছায়াপথের ঘনত্ব অনেক বেশি। শেষ হলে একাধিক গ্যালাক্সি একে অপরের সাথে সংঘর্ষের মাধ্যমে মিশে যায় এর ফলে ছায়াপথের সংখ্যা কমে যেতে পারে। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির প্রতিবেশী ছায়াপথের নাম অ্যান্ড্রোমিডা গ্যালাক্সি। আগামী বছরের মধ্যে মিল্কিওয়ে এবং অ্যানড্রোমিডা ছায়াপথ ধাক্কা লেগে একটি আরেকটির ভেতরে ঢুকে যাবে। একটি ছায়াপথ তৈরি হতে সময় লাগবে প্রায় ১০ কোটি বছর একত্রিত হওয়ার পর এর নাম হবে নিলকণ্ঠা গ্যালাক্সি। এই অফার সম্পর্কে গবেষণা হচ্ছে ততই যেন এগুলো আমাদের বোধশক্তির সীমাকে অতিক্রম করে যাচ্ছে। 

মহাবিশ্বে প্রধানত দুই ধরনের ছায়াপথ দেখতে পাওয়া যায় একটি হলো নিরাপদ এবং আরেকটি লাল ছায়াপথ যে ছায়াপথে এখনো নতুন নতুন তার জন্ম হচ্ছে। সেগুলো কে বলা হয় নিরাপদ এবং যে সমস্ত ছায়াপথে নতুন তারা উৎপত্তির প্রক্রিয়া থেমে গেছে সে গুলোকে বলা হয় লাল ছায়াপথ।বিজ্ঞানীদের ধারণা প্রায় ২০০ কোটি বছর পরে একটি নীল ছায়াপথ লাল হতে শুরু করে। কোটি কোটি নক্ষত্র ও তারা দিয়ে গঠিত ছায়াপথের মৃত্যু ঘটে। তবে কিছু ছায়াপথ ১০০ কোটি বছরের মধ্যে মারা যেতে পারে যা মহাকাশীয় বস্তুর তুলনায় খুবই কম সময়ে ছায়াপথের মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো এদের মধ্যবর্তী গ্যাস শেষ হয়ে যাওয়া কিন্তু এই গ্যাস কিভাবে শেষ হয় সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের কাছে কোন তথ্য নেই। 

তবে মহাকাশ গবেষক এরা ধারণা করেন মৃতপ্রায় ছায়াপথের প্রতিবেশী ছায়াপথ অথবা কোন ব্ল্যাকহোল এসব গ্যাস শুষে নিতে পারে। ব্ল্যাকহোল মহাবিশ্বের আরেক অদ্ভুত উপাদান বাংলায় একে বলা হয় কৃষ্ণগহবর। প্রত্যেক ছায়াপথের কেন্দ্রেই অন্তত একটি অতি বৃহৎ ব্ল্যাকহোল রয়েছে। আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথ এই দশ লক্ষেরও বেশি ব্ল্যাক হোল আছে। ব্ল্যাকহোলের সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার হলো এগুলো সম্পূর্ণ অদৃশ্য চোখে দেখা না গেলেও ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ব অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। মহাকাশের ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহ্বর সম্পর্কে জানতে চাইলে কমেন্ট করে জানান......

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url