আলোর গতিতে ছুটবে নাসার মহাকাশযান নতুন আবিষ্কারে উল্লসিত বিজ্ঞানীরা

    আলোর গতিতে ছুটবে নাসার মহাকাশযান নতুন আবিষ্কারে উল্লসিত বিজ্ঞানীরা
    আলোর ঠেলায় এই ভাবেই ছুটবে মহাকাশযান ছবি।


    হ্যালো বন্ধুরা  এ বার হয়তো আলোর পালে ভর করে ছোটা যাবে মহাকাশে। ভাবনার বাইরে থাকা দূরত্বকে এ বার হয়তো কাছে এনে দেবে আলো। যেখানে পৌঁছনো কোনও মানুষের আয়ুষ্কালে একেবারেই অসম্ভব তাকে সম্ভব করে তুলবে আলোই।সে দিন হয়তো আর খুব দূরে নেই যখন প্রায় আলোর গতিতে ছোটা সম্ভব হবে মহাকাশে। আলোর জোগানো শক্তিতে এক কি দু’দশকের মধ্যেই হয়তো ছোঁয়া যাবে মাত্র চার আলোকবর্ষ দূরে থাকা প্রতিবেশী নক্ষত্রমণ্ডল প্রক্সিমা সেনটাওরিকে। যেখানে পৌঁছতে এখনকার মহাকাশযানগুলির সময় লাগত ৪০ হাজার বছর।

    ৪০ হাজার বছর ধরে পাড়ি দিয়ে ব্রহ্মাণ্ডে যে দূরত্বে পৌঁছত হয়। তাকে আরও তাড়াতাড়ি একটি মানুষের আয়ুষ্কালেই কাছে পেতে গত কয়েক শতাব্দী ধরেই গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন মহাকাশবিজ্ঞানী ও মহাকাশ প্রষুক্তিবিদরা।কিন্তু তাঁদের এত দিনের সেই নিরলস সাধনার ফলপ্রসূ হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আলোই। আলোর ধর্ম হল আলোর কণার প্রায় ভরশূন্যতা। অথচ আলোর গতিতে ছুটতে পারলে কী রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা হতে পারত। পৌঁছনো যেত ভাবনার থেকে বাইরে থাকা এই ব্রহ্মাণ্ডের অজানা অচেনা জগতে।

    কল্পনাতীত দূরত্বে থাকা সেই সব জগতে পৌঁছনো যে এখনকার সর্বাধুনিক কোনও মহাকাশযানের পক্ষেই সম্ভব নয়। সৌরশক্তি সহ যে সব জ্বালানির ভরসায় সেগুলি পাড়ি জমায় মহাকাশে ছুটে চলে লক্ষ কোটি মাইল। তা দিয়ে কোনও মানুষের আয়ুষ্কালে কোনও মহাকাশযানের পক্ষে আমাদের সবচেয়ে কাছের নক্ষত্রমণ্ডলকে ছোঁয়াও অসম্ভব।

    কিন্তু যদি সেই মহাকাশযান ছোটে গতি যদি পৌঁছতে পারে ।আলোর গতিবেগের সেকেন্ডে ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল। মাত্র ২০ শতাংশে তা হলেও অন্তত ব্রহ্মাণ্ডে আমাদের কাছেপিঠের বহু অজানা মুলুক এসে যেতে পারে আমাদের মুঠোয়।কিন্তু আলোর কণা ফোটন প্রায় ভরশূন্য বলে তার ঠেলার জোরও যে খুব কম। সেই জোর কাঙ্খিত স্তরে বাড়িয়ে তুলতে গেলে আলোর কণার ঝাপ্‌টায় মহাকাশযানের আবরণটাই ঝলসে যেতে পারে।

    এ বার সেই সমস্যা সমাধানের পথ দেখাল দু’টি গবেষণা। যার একটি আমেরিকার পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের। অন্যটি, লস অ্যাঞ্জেলসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের। দু’টি গবেষণাপত্রই একসঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে মহাকাশ প্রযুক্তি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক গবেষণা পত্রিকা ‘ন্যানো লেটার্স’-এ।অর্থমূল্যে নোবেল পুরস্কারের চেয়েও দামি বিজ্ঞানে ব্রেকথ্রু’ পুরস্কার দেয়। যে সংস্থা তাদেরই ব্রেকথ্রু স্টারশট কর্মসূচির অর্থানুকূল্যে চালানো হয়েছে এই দু’টি গবেষণা আলাদা আলাদা ভাবে।

    গবেষকরা দেখিয়েছেন, খুব অল্প সময়ে মহাকাশের সেই কল্পনাতীত দূরত্বে পা রাখার অসাধ্যসাধন সম্ভব।হাওয়া দেওয়ার সময় পথে হাঁটলে যেমন আমাদের পরা জামা তার ঠেলায় ওড়ে, ফুলে ওঠে এ দিকে ও দিকে, ঠিক তেমনই হয় আলোর ক্ষেত্রেও। তবে আলোর কণার প্রায় কোনও ভর নেই বলেই তার ঠেলার জোর হয় নগণ্য। আমাদের নজরেও পড়ে না। সূর্যস্নানের সময় আমাদের গা থেকে যে আলো ঠিকরে বেরিয়ে এসে প্রতিফলিত হয়, তার জোর খুব বেশি হলে এক গ্রামের এক হাজার ভাগের এক ভাগ। নগণ্য বললেও কমই বলা হয়।

    এই সমস্যা দূর করার বহু চেষ্টা আগেও হয়েছে। কখনও মহাকাশযানের আকার বাড়ানোর পরিকল্পনা করে। যাতে তার উপর আরও বেশি পরিমাণে ফেলা যায় লেসার রশ্মির আলো। যাতে সেই আলোর ঠেলার জোর বাড়ে বহু গুণ। কিন্তু তাতে মহাকাশযানের ভরও যে খুব বেড়ে যায়। যা হালকা হলে আলোর পক্ষে তাকে ঠেলার কাজটা অনেক সহজ হয়। মহাকাশযানকে খুব হালকা করলেও বিপদ। মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার সময় তা সামান্য ধূলিকণার ঝাপটাতেও ভেঙে পড়তে পারে।

    আরও পড়ুন: ডাইনোসর ছিল যাদের জলখাবার,এমন দৈত্যাকার কুমিরের সন্ধান পাওয়া গেছে


    মহাকাশযানের পালে লাগবে আলোর ও বাতাস, তাহলে দ্রুত পৌঁছনো যাবে আশপাশের নক্ষত্রমণ্ডলে
    আলোর সরণী ধরে পৌঁছনো যাবে আশপাশের নক্ষত্রমণ্ডলে ছবি।

    আরও পড়ুন: সেলফি তুলে পাঠাল নাসার জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ

    আর একটি উপায় নিয়েও অতীতে গবেষণা হয়েছে বিস্তর। সেটি হল, আরও বেশি পরিমাণে খুব অল্প জায়গার উপর খুব শক্তিশালী লেসার রশ্মির পুরোটাই ফেলা। কিন্তু তাতে মহাকাশযানের বাইরের আবরণের ক্ষতি হয়। কারণ সেই রশ্মি শুষে নেয় আবরণ। ফলে, তা অল্প সময়েই খুব তেতে যায়। মহাকাশে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে যা বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে।

    পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তিবিদদের কৃতিত্ব, তাঁরা এমন দু’টি পদার্থের স্তর দিয়ে মহাকাশযানের সেই আবরণ বানানোর পথ দেখিয়েছেন যাতে আবরণ খুব শক্তিশালী লেসার রশ্মির ঝাঁক এসে পড়লেও তেতে উঠবে না। সেই দু’টি যৌগ মলিবডেনাম ডাইসালফাইড ও সিলিকন নাইট্রাইড।

    আর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তিবিদদের কৃতিত্ব, তাঁরা মহাকাশযানের এমন আকার ও আকৃতির নকশা দিতে পেরেছেন যাতে লেসার রশ্মির ঠেলার জোরও বাড়ানো যাবে আবার মহাকাশযান আকারে খুব ছোট বা ওজনে খুব হালকা হয়ে গিয়ে মহাকাশে পাড়ি জমাতে গিয়ে বিপদে পড়বে না।

    ফলে, আলোর পালে ভর দিয়ে কাছেপিঠের নক্ষত্রমণ্ডলে পৌঁছনোর দিনের জন্য আগামী দিনের মহাকাশযানকে বোধহয় আর খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না।এক কি দু’দশকের মধ্যেই পৌঁছনো যাবে চার আলোকবর্ষ দূরে থাকা নক্ষত্রমণ্ডল প্রক্সিমা সেনটাওরি-তে। আশপাশের অন্যান্য নক্ষত্রমণ্ডলেও। ব্রহ্মাণ্ডে নাগালের বাইরে থাকা দূরত্বও এসে যাবে হাতের মুঠোয়।

    ধন্যবাদ বন্ধুরা 

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    নবীনতর পূর্বতন

    যোগাযোগ ফর্ম