বলয় গ্রহ কাকে বলে?

    বলয় গ্রহ কাকে বলে 1
    গ্রহীয় বলয় ছবি।


    গ্রহীয় বলয় ইংরেজি নাম Planetary ring। বলয় বলতে কোন গ্রহের চারপাশে একটি নির্দিষ্ট চাকতি আকৃতির অঞ্চলে আবর্তনরত ধূলি ও ছোট ছোট কণার বেষ্টনীকে বোঝায়। সবচেয়ে স্পষ্ট ও দর্শনীয় বলয় রয়েছে সৌর জগতের শনি গ্রহের চারপাশে। এছাড়াও সৌর জগতের অন্য তিনটি গ্যাসীয় গ্রহ বৃহস্পতি, ইউরেনাস ও নেপচুন চারপাশে বলয় রয়েছে। ক্যাসিনি নভোযান থেকে পাওয়া তথ্য থেকে সম্প্রতি ধারণা করা হচ্ছে যে, শনির একটি উপগ্রহের চারদিকেও বলয় রয়েছে। রিয়া নামের এই উপগ্রহের বলয় আবিষ্কৃত হলে প্রমাণিত হবে যে, উপগ্রহেরও বলয় থাকতে পারে।

    বলয় গ্রহ কিভাবে সৃষ্টি হল

    বিজ্ঞানীদের ধারনা তিনটি উপায়ে গ্রহীয় বলয় গঠিত হতে পারে যথাঃ

    ১। ভ্রূণ গ্রহীয় চাকতির যে উপাদানগুলো রোশ সীমার মধ্যে ছিল সেগুলো একসাথে মিলে উপগ্রহ গঠন করতে পারেনি। এরাই বলয় গঠন করেছে।

    ২। গ্রহটির কোন উপগ্রহ বিরাট কোন সংঘর্ষের মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে গেলে সেই ধ্বংসাবশেষ থেকে গঠিত হতে পারে।

    ৩। উপগ্রহটি হয়তো হঠাৎ কখনও রোশ সীমার ভিতর দিয়ে যাচ্ছিল। যাওয়ার সময় গ্রহের জোয়ার-ভাটা জনিত টানে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।

    সৌর জগতের বিভিন্ন বলয়

    শনির বলয়

    শনি গ্রহটি তার আকর্ষণীয় বলয়ের কারণেই সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহের তুলনায় সৌন্দর্য্যের উৎকর্ষে রয়েছে। যা মহাজাগতিক ক্যানভাসে সৃষ্টি করেছে এক বিমূর্ত চিত্র। ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দের জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি সর্বপ্রথম টেলিস্কোপের মাধ্যমে শনি গ্রহকে পর্যবেক্ষণ করেন এবং বলয় দেখতে পান।  অবশ্য দীর্ঘদিন চেষ্টার পর বিজ্ঞানীরা এটি আবিষ্কারে সফল হন। মজার ব্যাপার হলো সদ্য আবিষ্কৃত বলয়টি এতটাই বিশাল যে, এর ভেতর একশ কোটি বা এক বিলিয়ন পৃথিবী ভরে রাখার মত জায়গা আছে। বলয়টির মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বরফ, ধুলাবালি ইত্যাদি ধরা পড়ে। বলয় নিয়ে সবচেয়ে আকর্ষনীয় বিষয় হলো শনির আসলে একটি বলয় না কয়েক হাজার বলয় রয়েছে, যা এতকাল মানুষ জানতো না। কিছুদিন আগে তা আবিষ্কার করা হয়েছে।

    বৃহস্পতি বলয়

    বৃহস্পতি গ্রহের ভিতরের দিকের কয়েকটি উপগ্রহ তার বলয়ের মধ্যে অবস্থিত। এমনকি এদের অবস্থান বৃহস্পতির রোশ সীমার মধ্যেই। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মেটিস এবং অ্যাড্রাস্টিয়া। এটা সম্ভব যে, এই উপগ্রহগুলো থেকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বস্তু খসে পড়ে বলয়ের অংশ হয়ে যাচ্ছে। এগুলোর পৃষ্ঠে বলয়ের মত উপাদান থাকায় গ্রহের জোয়ার ভাটাজনিত টানে এগুলো বেরিয়ে পড়ে। রোশ সীমার মধ্যে অবস্থিত যেকোন উপগ্রহ কেবল তার যান্ত্রিক শক্তির মাধ্যমে পতন থেকে নিজেকে ঠেকিয়ে রাখে মহাকর্ষের মাধ্যমে নয়। এর ফলে প্রতিনিয়তই তাকে হারাতে হয় অনেক কিছু।

    নেপচুনের বলয়

    নেপচুনের বলয়গুলো খুবই অস্বাভাবিক। প্রথমে বিজ্ঞানীরা মনে করেছিলেন যে, সেখানে কেবল অসম্পূর্ণ কিছু বক্র অংশ আছে। কিন্তু ভয়েজার ২ থেকে তোলা ছবির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, এটি পূর্ণ বলয় তবে অনেকটা গুচ্ছ গুচ্ছ হয়ে আছে। ধারণা করা হচ্ছে যে, গ্যালাটিয়া এবং অনাবিষ্কৃত আরও কিছু রাখাল উপগ্রহের কারণে এই গুচ্ছবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।


    বলয় গ্রহ কাকে বলে?
    বলয় দেখতে কেমন ছবি।


    আরও পড়ুন: ৫০ বছরে এই প্রথম! সূর্যের এত স্পষ্ট ছবি আগে কখনও আসেনি

    ইউরেনাসের বলয়

    ইউরেনাসের বলয়গুলি জটিলতার দিক থেকে শনির অধিকতর বিস্তৃত বলয় মণ্ডলী এবং বৃহস্পতি ও নেপচুনের অধিকতর সরল বলয় মণ্ডলীর মাঝামাঝি। ১৯৭৭ সালের ১০ মার্চ জেমস এল. এলিয়ট, এডওয়ার্ড ডব্লিউ. ডানহ্যাম ও জেসিকা মিংক ইউরেনাসের বলয়গুলি আবিষ্কার করেন।

    আরও পড়ুন: বিমানের ফুয়েল ট্যাঙ্ক মাঝ আকাশ থেকে খসে পড়লে কি হবে? ঠিক ভারতে এমনি হল এক দুর্ঘটনা

    এছাড়া বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, মঙ্গল গ্রহের উপগ্রহ ফোবোস আজ থেকে ৫০ মিলিয়ন বছর পর ভেঙে গিয়ে মঙ্গলের চারদিকে বলয় গঠন করবে। ফোবোসের নিম্ন কক্ষপথের কারণেই এটি ঘটবে। এছাড়া ধারণা করা হয়ে থিয়া নামক বস্তুর সাথে পৃথিবীর যে সংঘর্ষের কারণে চাঁদের সৃষ্টি হয়েছিল সেই সংঘর্ষের পরপর পৃথিবীরও বলয় ছিল।

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    নবীনতর পূর্বতন

    যোগাযোগ ফর্ম