পৃথিবীর জমজ গ্রহ কোনটি, কাকে বলে ও কেন?


    পৃথিবীর জমজ গ্রহ কোনটি, কাকে বলে ও কেন


    ওয়েস্টার্ন ডেটা সায়েন্স: সৌর জগৎকে যদি একটি পরিবার ধরা হয় তবে 3পৃথিবীর কিন্তু একটি যমজ বোন আছে।সেটি হলো শুক্র গ্রহ আকার-আকৃতি ও গাঠনিক উপাদানের সাদৃশ্যের জন্যই এরকমটি বলা হয়ে থাকে। সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে এটি দ্বিতীয় ও পৃথিবীর নিকটতম প্রতিবেশি গ্রহ। সাধারণভাবে পৃথিবীর আকাশে ভোরবেলায় একে সুক তারা ও সন্ধায় সন্ধ্যা তারা নামে ডাকা হয়।

    কেন শুক্র গ্রহকে পৃথিবীর জমজ বলা হয়

    শুক্রকে পৃথিবীর যমজ গ্রহ হিসাবে বিবেচনা করা হয় কারণ এটির আকার এবং আকৃতি অনেকটাই পৃথিবীর সাথে মেলে এবং এটির গঠনও অনেকটা একইরকমের।শুক্র গ্রহের অনেক বৈশিষ্ট্য একে সৌর জগতের ব্যতিক্রমধর্মী গ্রহ হিসাবে পরিচিত করেছে। সেসব বলার আগে ছোট্ট করে এ গ্রহের নামকরণ নিয়ে একটু বলে আসি। ২৪ ঘণ্টায় দিন আর ১২ মাসে বছর দেখে অভ্যস্ত আমরা পৃথিবীর মানুষেরা কি ভাবতে পারি সৌর জগতে এমন গ্রহও আছে যেখানে এক বছরের চেয়ে এক দিন বড়! এজন্যই শুক্রকে বাতিক্রমধর্মী বলেছিলাম। ভেনাস বা শুক্র নিজ অক্ষের মধ্যে এতটা ধীর গতিতে ঘোরে যে এটির এক দিন পৃথিবীর প্রায় ২৪৩ দিনের সমান। 

    আরও পড়ুন: পৃথিবীর নিকটতম গ্রহের নাম কি

    অথচ আপন কক্ষপথে পৃথিবীর ২২৫ দিনে গ্রহটি সূর্যের চারিদিকে একবার পরিক্রম করে। অর্থাৎ, পৃথিবীর ২২৫ দিনে শুক্র গ্রহের এক বছর। পৃথিবীসহ সৌর জগতের সব গ্রহ নিজ অক্ষের ওপর ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করে। কিন্তু ভেনাস ও ইউরেনাস এ দুটি গ্রহ ঘড়ির কাঁটার দিকে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে আবর্তিত হয়। যে কারণে শুক্র গ্রহে সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হয় ও পূর্ব দিকে অস্ত যায়। 

    আরও পড়ুন: গ্রহ গুলো গোলাকার হয় কেন! পৃথিবী সহ ব্রহ্মাণ্ডের সবগ্রহই গোলাকার এর কারণ কি?

    মহাকাশ বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, আদিতে শুক্র গ্রহ অন্যান্য গ্রহের মতোই আবর্তিত হতো কিন্তু বৃহদাকার কোনো গ্রহ/উপগ্রহের সাথে মহাসংঘর্ষের ম্যাসিভ কলুশন ফলে এটির ঘূর্ণন গতি স্থিমিত হতে হতে প্রায় স্থিরাবস্থা প্রাপ্ত হয়ে উল্টো দিকে ধীর গতিতে ঘূর্ণন শুরু করেছে। গ্রহটির আরেকটি অবাক করা বিষয় হচ্ছে এটির কোনো উপগ্রহ বা চাঁদ নেই।

    বর্তমানে এটি একটি মৃত গ্রহ। সৌরজগতের উষ্ণতম গ্রহ। এটি কার্বনডাই অক্সাইডের তৈরি একটি মৃত্যুফাঁদ শুক্রর বায়ুমণ্ডলে প্রায় ৯৬ শতাংই কার্বনডাই অক্সাইড, ৩.৫% নাইট্রোজেন ও সামান্য পরিমাণে অন্যান্য গ্যাস আছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সালফারডাই অক্সাইড। গ্রহটির পুরু মেঘের স্তর ভেদ করে সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারে কিন্তু বের হতে পারে না। এই গ্রিন হাউজ ইফেক্টের ফলেই সময়ের পরিক্রমায় গ্রহটিতে এই ভূতুড়ে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। অচিন্তনীয় বায়ুচাপ শুক্রের ভুপৃষ্ঠে আপনাকে দাঁড়াতেই দেবে না। নাসার বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হচ্ছে, পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের তুলনায় ৭৫-১০০ গুণ বেশি বায়ুচাপ শুক্রপৃষ্ঠে।

    বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, এই মৃত্যুপুরী নাকি আনুমানিক ৪ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর মতোই বাসযোগ্য ছিল। নদী ছিল, সাগর ছিল, প্রাণের স্পন্দনও হয়তো ছিল। কিন্তু প্রায় ৩.৮ বিলিয়ন বছরের পরিক্রমায় আমাদের সূর্য তার পূর্বাবস্থার চেয়ে ২৫% বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে। এরই সাথে সাথে শুক্র গ্রহের তাপমাত্রাও বহুগুণে বেড়েছে; ক্রমে ক্রমে বাষ্প হয়ে উধাও হয়ে গেছে এর নদী, সমুদ্রসহ সকল জলাধার। এই সময়েই পৃথিবীতে প্রাণসহনীয় তাপমাত্রার উন্মেষ ঘটেছে। শুক্র গ্রহের এই সুদূর অতীত আমাদের পৃথিবীর ভবিষ্যৎ বলে দেয়। তাই শুক্র গ্রহকে পৃথিবীর জমজ বলা হয়।

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    নবীনতর পূর্বতন

    যোগাযোগ ফর্ম