লোহা কি দিয়ে তৈরি হয়?

    লোহা কি দিয়ে তৈরি হয়?
    লোহার তৈরি পদ্ধতির ছবি।


    লোহা কি ও কি কি উৎপাদন রয়েছে

    ওয়েস্টার্ন ডেটা সায়েন্স: আমরা অনেকে জানিনা লোহা কি দিয়ে তৈরি হয়। বাংলা নাম হল লোহা বা loɦa।লোহার ইংরেজি নাম হল Iron বা লাতিন Ferrum লৌহ একটি ধাতব মৌলিক পদার্থ। এর রাসায়নিক চিহ্ন Fe, পারমাণবিক সংখ্যা ২৬, পারমাণবিক ভর ৫৫.৮৫, যোজ্যতা ২ ও ৩। লোহার ঘনত্ব ৭.৮৫ গ্রাম/সিসি অর্থাৎ জলের থেকে ৭.৮৫ গুণ ভারি। এর গলনাঙ্ক ১৫৩৮° সেলসিয়াস এবং স্ফুটনাঙ্ক ২৮৬২° সেলসিয়াস। লোহাকে প্রকৃতিতে মুক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় না। 

    আকরিক থেকে লোহা নিষ্কাশন করা হয়। লোহার প্রধান আকরিকগুলি হলো হেমাটাইট (Hematite, Fe2O3), ম্যাগনেটাইট (Magnetite, Fe3O4), আয়রন পাইরাইটিস (Iron Pyrites, FeS2) ও সিডারাইট (Siderite,FeCO3), লিমোনাইট (Fe2O3.3H2O)। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে প্রচুর লোহার আকরিক পাওয়া যায়। ভূ-ত্বকে লোহার পরিমাণ শতকরা ৪.১২ ভাগ।

    লোহার রাসায়নিক ধর্ম

    বায়ুর সঙ্গে বিক্রিয়াঃ শুষ্ক বায়ুর সঙ্গে লোহা বিক্রিয়া করে না। আর্দ্র বায়ুর মধ্যে লোহা রাখলে কিছু দিনের মধ্যে লোহার ওপরে হলুদ রঙের আস্তরণ পড়ে একে মরিচীকা বা মরিচা বলে। মরিচীকা হলো পানিযুক্ত ফেরিক অক্সাইড 2Fe2O3, 3H2O। লোহার সঙ্গে বায়ুর অক্সিজেন এবং জলীয় বাষ্পের বিক্রিয়ায় মরিচা উৎপন্ন হয়। বিশুদ্ধ লোহায় মরিচীকা পড়ে না। বায়ু বা অক্সিজেনের উপস্থিতিতে লোহাকে তীব্রভাবে উত্তপ্ত করলে জ্বলে ওঠে এবং ফেরোসোফেরিক অক্সাইড [Fe3O4] উৎপন্ন হয়।

    জলের সঙ্গে বিক্রিয়াঃ সাধারণ উষ্ণতায় বিশুদ্ধ লোহার সঙ্গে জলের কোনো বিক্রিয়া হয় না। লোহিত তপ্ত লোহার উপর দিয়ে স্টিম চালনা করলে ফেরোসোফেরিক অক্সাইড এবং হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়।

    ক্ষারের সঙ্গে বিক্রিয়াঃ সাধারণ অবস্থায় ক্ষারের সঙ্গে লোহার বিক্রিয়া হয় না। কিন্তু গাঢ় সোডিয়াম হাইড্রক্সাইডের সঙ্গে লোহা বিক্রিয়া করে সোডিয়াম ফেরাইট এবং হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপন্ন করে।

    বিভিন্ন প্রকার লোহা

    ঢালাই লোহা একটি অশুদ্ধ লোহা। এর মধ্যে 2 থেকে 4.5 শতাংশ কার্বন থাকে। এছাড়া সামান্য পরিমাণে সিলিকন [Si], ম্যাঙ্গানিজ [Mn], সালফার [S] এবং ফসফরাস [P] থাকে। ছাঁচে ঢালাই করা দ্রব্য, যেমন, লোহার নল, আলোকস্তম্ভ, উনুনের শিক প্রভৃতি প্রস্তুতিতে ঢালাই লোহা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়া রট আয়রন এবং ইস্পাত প্রস্তুতিতে ঢালাই লোহার বেশির ভাগ অংশ ব্যবহৃত হয়।

    স্টিল এর মধ্যে কার্বনের পরিমাণ 0.15 থেকে 1.5 শতাংশ থাকে। স্টিলকে লোহিত তপ্ত করে পানিতে ডুবিয়ে আবার 200 °C — 350 °C উষ্ণতায় উত্তপ্ত করলে এর নমনীয়তা ও দৃঢ়তা বাড়ে। এই পদ্ধতিকে ইস্পাতের পানদান বলা হয়। রেল এবং ট্রামলাইন, গাড়ি, জাহাজ, কড়ি, নানরকম যুদ্ধাস্ত্র, যন্ত্রপাতি, ছুরি, কাঁচি, ব্লেড, চাষের জন্য লাঙ্গলের ফলা, ট্রাক্টর প্রভৃতি প্রস্তুত করা হয়। করাত, স্থায়ী চুম্বক, সেতু, গাড়ির স্প্রিং প্রভৃতিতে স্টিল ব্যবহৃত হয়। এছাড়া স্টিলের সঙ্গে সামান্য পরিমাণ অন্য ধাতু মিশিয়ে নানারকম সংকর স্টিল উৎপন্ন করা হয়। নানারকম সংকর স্টিলের মধ্যে রয়েছে।


    লোহা কি দিয়ে তৈরি হয় 1
    বিভিন্ন প্রকার লোহার ছবি।

     

    আরও পড়ুন: এরোপ্লেন কে আবিষ্কার করেন?

    ১।নিকেল স্টিলঃ নিকেল [Ni] 3.25% — রেলের পাটি এবং বিভিন্ন গাঠনিক কার্যে ব্যবহৃত হয়।

    ২।ইনভারঃ নিকেল [Ni] 3.5% — পেন্ডুলামের রড, মিটার স্কেল, প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।

    ৩।ম্যাঙ্গানিজ স্টিলঃ ম্যাঙ্গানিজ [Mn] 12%-14% — রেল লাইন, সিন্দুক, পাথর চূর্ণের মেশিন, হেলমেট ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহ্রত হয়।

    ৪।স্টেইনলেস স্টিলঃ ক্রোমিয়াম [Cr] 10%-15% — অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত ছুরি, কাঁচি, এবং বাসন প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।

    ৫।ডুরায়রনঃ সিলিকন [Si] 16% — অ্যাসিড রাখার পাত্র রূপে ব্যবহৃত হয়।

    ৬।টাংস্টেন স্টিলঃ টাংস্টেন [W] 18% এবং ক্রোমিয়াম [Cr] 5% — যেসব যন্ত্র দ্রুত ঘোরানো হয়, সেসব যন্ত্র প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।

    আরও পড়ুন: কাঁচ কিভাবে তৈরি হয়?

    পেটা লোহাঃ অনেকটা বিশুদ্ধ। এর মধ্যে 0.1 থেকে 0.15 শতাংশ কার্বন থাকে। তড়িৎচুম্বকের মজ্জা, তার, শিকল, পেরেক, ডায়নামো ও মোটরের ভিতরের অংশ, তালা-চাবি, ঢালাই করার জন্য লোহার রড প্রভৃতি প্রস্তুতিতে এবং ওয়েল্ডিং প্রভৃতি কাজে ব্যবহৃত হয়।

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    নবীনতর পূর্বতন

    যোগাযোগ ফর্ম